রোহিঙ্গা সঙ্কট: মধ্যস্থতার আশ্বাস চীনের, পাল্টে যেতে পারে পরিস্থিতি

ডেস্ক রিপোর্ট – দেশি-বিদেশি কোনো পদক্ষেপেই কাটছে না রোহিঙ্গা সংকট। বাংলাদেশের পথে রোহিঙ্গাদের ঢলের দুই বছর পরও তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে অচলাবস্থা কাটেনি।

এমন অবস্থায়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের কাছ থেকে মধ্যস্থতা করার আশ্বাস পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। আর চীনকে এতে সম্পৃক্ত করা গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা। খবর – পার্সটুডে

রোহিঙ্গা সঙ্কটের সবশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন তিনি। এ সময়, চলমান সঙ্কট সমাধানে কূটনীতিকদের আরও জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

এছাড়া যেসব এনজিও রোহিঙ্গাদের নানাভাবে বিভ্রান্ত করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ভারত ও চীন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সেভাবে বাংলাদেশের পাশে আসেনি।

বিশেষ করে চীন বড় দেশ, তাদের সমর্থন আমাদের দরকার। কারণ দেশটি নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। চীনকে পাশে পাওয়া গেলে, নিরাপত্তা পরিষদে যদি সর্বসম্মত কোন সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।

রোহিঙ্গারা যেসব দেশে অবস্থান করছে, সেসব দেশকেও পাশে টানার পরামর্শ দিয়েছেন এ বিশ্লেষক। তিনি বলেন, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, আমেরিকা, জাপানসহ ১৮/১৯টি দেশে বর্তমানে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে।

সংকট সমাধানে তাদেরকেও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে। তাহলে রোহিঙ্গা সংকট তখন শুধু বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সিরিয়াস হতে বাধ্য হবে।

সবশেষ গত ২২ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ভেস্তে যায়। নিরাপত্তা, নাগরিকত্বসহ কয়েকটি দাবির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে আপত্তি জানায় রোহিঙ্গারা। এরফলে ঝুলে যায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।

এজন্য মিয়ানমার সরকারের স্বেচ্ছাচারিতাকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা।

মানবিক কারণেই প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ সরকার। খাদ্য, বস্ত্রসহ নানা ধরনের সহায়তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায় স্থানীয়রাসহ পুরো দেশের মানুষ।

কিন্তু সময়ে সঙ্গে গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গারা। গাছপালা ধ্বংস, পাহাড় কাটার পাশাপাশি নানা ধরনের অপরাধেও জড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গারা।

বিশ্লেষকদের মতে, দ্রুত তাদের ফেরত পাঠাতে না পারলে শুধু আর্থ-সামাজিক সংকট নয়, বাংলাদেশের নিরাপত্তাই হুমকিতে পড়বে।

মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গা ও সামরিক জান্তা সরকারের নির্যাতনে প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছাড়ে রোহিঙ্গারা। ১৯৭৮ সালে শুরু হয় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ। ২০১৭ সাল পর্যন্ত আশ্রয় নেয় প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।

২০১৭ সালে আবারও শুরু হয় জাতিগত নিধনযজ্ঞ। ওই বছরের ২৫ আগস্টের পর, নতুন করে পালিয়ে আসে আরও ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।